বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ মহামারিতে অন্যান্য সবকিছুর মতো শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু অনেকের সামর্থ না থাকায় তাতে অংশ নিতে পারছেন না। অনেকে অনেক কষ্টে সন্তানদের যুক্ত করাচ্ছেন। যেমনটা ঘটেছে ভারতের হিমাচল প্রদেশে।
হিমাচল প্রদেশের এক দরিদ্র পরিবারে দুটি গরু ছিল জীবিকার উপায়। কিন্তু মাত্র ছয় হাজার রুপিতে একটি গরু বিক্রি করে দুই সন্তানের জন্য স্মার্টফোন কিনতে বাধ্য হয়েছেন বাবা। ঋণের জন্য ব্যাংকসহ অনেক জায়গায় চেষ্টা করেও কিছু করতে না পারে নিজেদের শেষ সম্বল গরু বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয় তাকে। কুলদীপ কুমার নামে ওই ব্যক্তির মেয়ে অনু আর ছেলে যথাক্রমে চতুর্থ ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় তারা দুজই সরকারি স্কুলে পড়েন। কিন্তু অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিপদে পড়েন বাড়ির অভিভাবক। ছোট্ট দুই ছেলে-মেয়ের জন্য আয়ের একমাত্র উৎস গুরু বিক্রি করতে হয় তাকে।
কুলদীপ কুমার বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা যাতে পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারে তাই আমি একটি স্মার্টফোন কিনেছি। বাচ্চা দুটো ক্লাস করতে চায কিন্তু আমি বাবা হয়েও তাদের জন্য একটা ফোন কিনতে পারবো না এটা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল। তাই ছয় হাজার রুপিতে দুটি গরুর একটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেই আমি।
তিনি জানান, ‘অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি শুরু হওয়ার পর তাদের (দুই সন্তানের) স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে বলেন, ‘‘যদি ছেলে-মেয়েদের পড়াতে চান তাহলে আপনাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’’ কোনো উপায়ে একটি স্মার্টফোন কেনার ব্যবস্থা করতে না পেরে আমরা সিদ্ধান্ত নেই গরু বিক্রি করবো।
শেষ উপায় হিসেবে তার কাছে এই গরু বিক্রির ব্যাপারটি অবশিষ্ট ছিল। এর আগে কুলদীপ কুমার ব্যাংকসহ ব্যক্তিগত ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউই তাকে ঋণ দেয়নি। অবশেষে দুই সন্তানের শিক্ষার কথা ভেবে গরু বিক্রি করা ছাড়া তার কাছে আরও কোনো উপায় ছিল না বলে জানান তিনি।
কুলদীপ কুমার দুধ বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তার স্ত্রী দিনমজুর। তবে করোনার কারণে স্ত্রীর কাজও বন্ধ। এখন ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটা গরু বিক্রি করে দেওয়ায় ওই পরিবারে অবশিষ্ট একটি গরু রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে সরকার চালানো নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কুলদীপ।
অনলাইনে ক্লাস শুরুর বিষয়টি শুরু হওয়ার পর ডিজিটাল ডিভাইড ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার ছাড়াও ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতি ও উচ্চমূল্য পরিশোধের বিষয়টিও সামনে উঠে আসছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে। অনেকে এই পদ্ধতির সমালোচনাও করছেন।
Leave a Reply